চান মিয়া, ছাতক (সুনামগঞ্জ) সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভাসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে চিকিৎসকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই লোকালয়ে পশু জবাই চলছে। ফলে বিভিন্ন রোগাক্রান্ত পশুর মাংস খেয়ে অসুস্থ্য হচ্ছেন স্থানীয়রা। মাংস বিক্রেতারা জানেনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা। এভাবে তদারকি না থাকায় ছাগলের বদলে ভেড়াও ষাঁড়ের বদলে গাভীর মাংস ক্রয় করে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। জানা যায়, ছাতক পৌরসভায় পশু জবাইয়ের নির্দিষ্ট কোন কসাইখানা নেই। এগ্রেডের এই পৌরসভায় দেড় যূগ থেকে ভ্যাটেরিনারী সার্জন ও স্যানিটারী ইন্সপেক্টরের পদ শূন্য রয়েছে। এতে খাবার অযোগ্য রোগাক্রান্ত পশু ডাক্তারি পরীক্ষাও সীল ছাড়াই নোংরা পরিবেশে জবাই ও মাংস বিক্রি হচ্ছে। মাছ বিক্রেতারা জানান, মাছ বাজারের পাশেই নোংরা পরিবেশে মাংস বিক্রির ফলে মশা, মাছি, পোকামাকড়ও কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে। মশা-মাছির মাধ্যমে মানুষের শরীরে ছড়াচ্ছে বিষাক্ত জীবাণু। ফলে হাঁপানি, জন্ডিস, যক্ষ্মা, ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি দেশে অ্যানথ্রাক্স রোগের (গরুর তড়কা রোগ) প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও ছাতকের হাট-বাজারগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই পশু জবাই করা হচ্ছে। মাংস বিক্রেতা হারুন মিয়া জানান, মাংস বিক্রির ক্ষেত্রে গবাদিপশু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে তাদের তেমন কিছু জানা নেই। এদিকে বাচ্চা, চাষাবাদ যোগ্য বলদও দুধের গাভী জবাই করা নিষিদ্ধ থাকলেও ভোরে লোকচক্ষুর আড়ালেই দেদারসে এসব পশু জবাই হচ্ছে। জানা গেছে, ১৩ইউনিয়নও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় শহর ছাড়াও গোবিন্দগঞ্জও জাউয়াবাজারে প্রতিদিনই পশু জবাই হচ্ছে। ‘গবাদি পশু জবাই (বিধিনিষেধ) ও মাংস নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ-১৯৫৭’ এ পশু জবাইখানায় আধুনিক পরীক্ষাগার, জবাইয়ের পূর্বে পশু পরীক্ষাও জবাইর পরে মাংস পরীক্ষা করে মাংসের ওপর সরকারি সিল মেরে বাজারে বিক্রি করতে হবে। এরসাথে যারা মাংস বিক্রি করবে তাদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন থেকে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সনদপত্র, গবাদিপশু জবাই সনদপত্র, মাংস কাটার যাবতীয় সরঞ্জাম ব্যবহারের আগে জীবানুমুক্ত করা, খোলা মাংস বিক্রি না করা এবং মাংসের দোকানে স্যানিটেশনের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা থাকলেও উপজেলার হাট-বাজারগুলোর কোনো মাংসের দোকানেই তা মানা হচ্ছে না। পশু জবাইখানা ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১১ এর ২৪(১) উপধারা মতে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনে প্রণীত বিধির কোনো বিধান লঙ্ঘন করেন বা তদনুযায়ী দায়িত্ব সম্পাদনে অথবা আদেশ অথবা নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হন, তাহা হলে তিনি অনুরূপ লঙ্ঘন অথবা ব্যর্থতার দায়ে অনূর্ধ্ব ১(এক) বৎসর বিনাশ্রম কারাদন্ড অথবা অন্যুন ৫ (পাঁচ) হাজার এবং অনূর্ধ্ব ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড, অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।’ দ্বিতীয়ত, ‘একই ব্যক্তি যদি পুনরায় এ আইন বা বিধির কোনো বিধান লঙ্ঘন করেন বা তদনুযায়ী দায়িত্ব সম্পাদনে বা আদেশ বা নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হন, তাহা হলে তিনি অনুরূপ লঙ্ঘন বা ব্যর্থতার দায়ে অনূর্ধ্ব-২ (দুই) বৎসরের বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অন্যুন ১০ (দশ) হাজার ও অনূর্ধ্ব ৫০ (প াশ) হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড, অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন।’ কিন্তু এখানে এআইন মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামান বলেন, এক সপ্তাহ আগে উপজেলা ভ্যাটেরিনারী সার্জনকে পশু জবাই ও মাংস বিক্রির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আইন মেনে চলার ব্যাপারে সচেতন করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এতে তৎপর না হলে পর্যায়ক্রমে সব মাংসের দোকানে অভিযান চালানো হবে। উপজেলা স্বাস্থ্যও পঃপঃ কর্মকর্তা অভিজিত শর্মা জানান, যত্রতত্র ও খোলা পরিবেশে পশু জবাইয়ে এলাকায় বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তবে এখানে এনথ্র্যাক্স রোগের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর ফারুক আহমদ জানান, পৌরও উপজেলা দু’টিই এখন তাকে দেখতে হচ্ছে। ব্যবসায়িরা ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে মাংস ব্যবসা করছে। তবে সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য আইন পাশ করা হয়েছে। এর বিধি চুড়ান্ত হলে ১৮টি সংস্থা আইনটি বাস্তবায়ন করবে। স্যানিটারী ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বিষয়ে তদারকি করা। পশু জবাইয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে প্রাণী সম্পদ বিভাগের ইউএলও/ভিএস। ছাতক পৌর সচিব মাহবুব আলম জানান, পৌরসভার অনুমোদিত কোন কসাইখানা নেই। তবে মাছ বাজারের পাশের মাংস বিক্রির দোকানগুলোকে পৌর কসাইখানা হিসেবে ধরা হয়। তবে পৌরসভায় ভ্যাটেরিনারী সার্জন ও স্যানিটারী ইন্সপেক্টর না থাকায় জবাইয়ের আগে পশুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছেনা। সরকারের কাছে এসব শূন্য পদে লোক নিয়োগের জন্যে প্রতি বছরেই আবেদন করা হচ্ছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডা.মুর্শেদ উদ্দিন আহমদ জানান, যেহেতু উপজেলায় সরকার অনুমোদিত কোন জবাইখানা নেই। সেহেতু যেসব স্থানে পশু জবাই হচ্ছে সেগুলো প্রাণী সম্পদ বিভাগের তদারকির আওতাভূক্ত নয়। ব্যবসায়িরা অফিসকে না বলেই ভোরে পশু জবাই করে থাকে বলে জানান তিনি।